উন্নয়ণের তালিকা দেওয়া বোর্ড রয়েছে , হয়নি উন্নয়ণ : ক্ষোভ ডিএসপির দত্তক নেওয়া গ্ৰামে

13th August 2021 8:45 am বর্ধমান
উন্নয়ণের তালিকা দেওয়া বোর্ড রয়েছে , হয়নি উন্নয়ণ : ক্ষোভ ডিএসপির দত্তক নেওয়া গ্ৰামে


নিজস্ব সংবাদদাতা ( পঃ বর্ধমান ) :  দুর্গাপুর  স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) দত্তক নেওয়া ১১ টি গ্রামে নতুন করে উন্নয়নের সাইন বোর্ড বসালেও হয়নি কোনও উন্নয়ন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। রাস্তা ও নর্দমা বেহাল সহ সিএসআর প্রকল্পে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, এই সব দুঃস্থ এলাকার মানুষদের সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের অর্থ আত্মসাৎ করছে এক শ্রেণির মানুষ। আর বড় বড় সাইনবোর্ড বসিয়ে আদর্শ ইস্পাত গ্রামের তকমা দিচ্ছে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। ঘটনার তদন্ত সহ উন্নয়নের দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী।স্থানীয় কাউন্সিলার থেকে পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, সিএসআর প্রকল্পের নামে তেমন কোনও কাজই হয়নি। আদর্শ ইস্পাত গ্রামের তকমা দিতে সাইনবোর্ডে একাধিক প্রকল্প উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় ও ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, রুপকার ডঃ বিধান চন্দ্র রায় দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল গড়ে তলেন। তাঁর দূরদর্শিতায় ১৯৫৫ সালে ডিএসপি কারখানা গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে শহরতলী থেকে গ্রামের দুঃস্থ এলাকা গুলিতে কারখানার কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব (সিএসআর) প্রকল্পে উন্নয়ন মূলক কাজ করা হয়। ধাপে ধাপে বিভিন্ন অর্থ বর্ষে এক একটি এলাকায় উন্নয়ন, শিক্ষা ও চিকিৎসা সহ দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় পরিসেবা মূলক বিভিন্ন কাজ করা হয়।
দুর্গাপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দাসিরবাঁধ ও কাঁকসা থানার আকুন্দারা গ্রাম সহ ১১ টি এলাকায় উন্নয়ন মূলক কাজ শুরু হয়। সেখানে কংক্রিটের রাস্তা, নর্দমা, শৌচালয়, কমিউনিটি হল, পানীয়জল, বিদ্যুৎ সহ একাধিক পরিসেবার ব্যবস্থা করে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন আগে। সিএসআর প্রকল্পে  নির্ধারিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পে প্রায় ২০ বছর আগে উন্নয়নমূলক কাজ হয়। মেলে বিদ্যুৎ পরিষেবা। কয়েক বছর কাটতেই উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পরিকাঠামো ভেঙে পরে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কোনও সংস্কার ও  উন্নয়ন না করেই কয়েকমাস আগে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ নতুন করে ফের উন্নয়নমূলক কাজের একধিক বিবরণের তালিকা তুলে ধরতে সাইনবোর্ড বসিয়েছে। আকুন্দারা গ্রামে ওই তালিকায় ১৫ টি বিবরণ দেওয়া আছে। তাতে লেখা রয়েছে, আদর্শ ইস্পাত গ্রাম। এই গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে, কমিউনিটি হল, সুলভ শৌচাগার, ধোঁয়াহীন চুলা, পিসিসি রোড সহ ড্রন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, সৌর বাতি, স্বাস্থ্য পরিষষেবা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, গৃহ বৈদ্যুতিককরণ, পুকুর সংস্কার, প্রাক - প্রাথমিক, প্রাথমিক ও কোচিং ক্লাস, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, বয়স্ক শিক্ষা, কর্ম বিকাশ ও মৎস্য চাষ। হঠাৎই সাইনবোর্ডের এই তালিকা দেখে হতবাক গ্রামবাসী।
ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী রসোনা মূর্মু, সুমি মূর্মু ও লক্ষীরাম মূর্মু বলেন, প্রায় ১৫ - ২০ বছর আগে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ এই এলাকার প্রাধান রাস্তা গুলি নর্দমা সহ কংক্রিটের করে দেয়। বর্তমানে রাস্তা নর্দমার বেহাল দশা। সোলার লাইট এলাকায় বসিয়েছিলো। সেগুলি বিকল হয়ে গিয়েছে।পানীয়জল সংগ্রহ করতে এলাকায় দুটি ছোটো  জলট্যাঙ্ক তৈরী হয়েছিলো। একটি থেকে এখনও জল পরিষেবা মিললেও প্রায় ভগ্নদশায় পরিনত হয়েছে। ধোঁয়াহীন চুলা, শৌচাগার সহ সব কিছুই চুলায় গিয়েছে বলে অভিযোগ। বয়স্কদের পড়াশোনা মেলিনি কখনও।
কমিউনিটি হলে বাচ্চাদের পড়াশোনা হয়। বর্তমানে বিদ্যুৎ অধিকাংশ বাড়িতে নেই। আর বাকি যে বিবরণ গুলি দেওয়া আছে তা কখনোই মেলেনি। এখন ফের নতুন সাইনবোর্ড বসিয়েছে। আমাদের অনুমান এই গ্রামের উন্নয়নের কথা বলে কোটি কোটি টাকা লুট হচ্ছে। আমরা গ্রামের সঠিক উন্নয়ন ও ঘটনার তদন্ত চাই। মলানদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পীযূষ মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা এলাকায় বেশকিছু কাজ করেছি। ডিএসপি কর্তৃপক্ষ এত গুলি কাজ করেনি।
দুর্গাপুরের দাসিরবাঁধ এলাকার বাসিন্দা মহেন্দ্র সিনকু ও পদ কিস্কু বলেন, এই এলাকায় প্রায় আড়াইশ পরিবার বসবাস করে। ডিএসপি কর্তৃপক্ষ বহুযুগ আগে কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ করেছিলো। সেগুলি প্রায় লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। কেবল কমিউনিটি হল ও একটি কুয়ো রয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসা ও বাচ্চাদের পড়াশোনা এখনও হয়। বয়স্কদের পড়াশোনা কোনও দিন হয়নি। কোনও সংস্কার বা উন্নয়ন মূলক কাজ হয়না এলাকায়। কিন্তু হঠাৎই একটি সাইনবোর্ড বসিয়েছে। যে সাইনবোর্ডে ১২ টি প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে সেগুলি কোথায়?এলাকায় সাইনবোর্ড বসিয়ে ছবি তুলে নিয়েছে। আর উন্নয়নের টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমরা এলাকার উন্নয়ন চাই। এই এলাকা দুটি সহ বাকি আদর্শ ইস্পাত গ্রাম গুলির প্রায় একই অবস্থা। স্থানীয় কাউন্সিলার শিপ্রা সরকার বলেন,বহুযুগ আগে ডিএসপি উন্নয়ন করেছিলো। সেগুলি বেহাল অবস্থা। আমরা এলাকায় শৌচাগার করে দিয়েছি। ডিএসপি কেবল সাইনবোর্ড লাগিয়ে সিএসআর প্রজেক্টের মাধ্যমে আদর্শ ইস্পাত গ্রামের তকমা দিচ্ছে।  ডিএসপি'র জনসংযোগ আধিকারি আশরাফুল হোসেন মজুমদার বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে।





Others News

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা

MEMARI . একবছর আগে আবেদন করেও মেলেনি জাতিগত শংসাপত্র : হন‍্যে হয়ে ঘুরছেন মা


প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : প্রায় এক বছর আগে আবেদন করেও মেয়ের জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি । আবেদনকারীদের জাতি শংসাপত্র দেওয়ার
ক্ষেত্রে দেরি করা যাবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটাই ঘটে চলেছে।প্রায় এক বছর আগে  চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে  আবেদন করেছিলেন মা।কিন্তু মেয়ে কে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসলেও জাতি  শংসাপত্র আজও না মেলায় কার্যত হতাশ হয়ে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রাধাকান্তপুর নিবাসী ঊর্মিলা দাস।ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য ঊর্মিলাদেবী বৃহস্পতি বার মেমারি ১ ব্লক বিডিও অফিসে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। শংসাপত্র পাবার জন্য বিডিও সাহেব কি ব্যবস্থা করেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে ঊর্মিলাদেবী। 

বিডিওকে লিখিত আবেদনে ঊর্মিলাদেবী জানিয়েছেন ,তাঁর স্বামী মানিক দাস দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ।বছর ১০ বয়সী তাঁদের একমাত্র কন্যা গ্রামের বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠরত কালে তাঁর ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী আবেদন করেছিলেন।  উর্মিলাদেবী বলেন ,তার পর থেকে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে  গেলেও তিনি তাঁর মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পান না।মেয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তির সময় এগিয়ে আসায় গত অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তিনি শংসাপত্রের বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে যান।জাতি শংসাপত্র বিষয়ের বায়িত্বে থাকা বিডিও অফিসের আধিকারিক তাঁকে অনলাইনে এই সংক্রান্ত একটি নথি বের করে আনতে বলেন । অনলাইনে সেই নথি বের করেনিয়ে তিনি ফের ওই আধিকারিকের কাছে যান । তা দেখার পর ওই আধিকারিক তাঁকে  ২০ দিন বাদে আসতে বলেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন , তিনি ২৫ দিন বাদে যাবার পর ওই আধিকারিক তাঁকে গোপগন্তার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজ নেবার কথা বলেন । তিনি এরপর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যান । নথি ঘেঁটে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে কোন ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি।ঊর্মিলাদেবী দাবী করেন ,এই ভাবে তিনি একবার বিডিও অফিস , আবার পঞ্চায়েত অফিসে দরবার করে চলেন । কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হয় না। মেয়ের ওবিসি শংসাপত্র পাবার জন্য  গত ১৩ ডিসেম্বর ফের তিনি বিডিও অফিসে যান ।ওই দিনও বিডিও অফিসের জাতি শংসাপত্র বিষয়ক বিভাগের আধিকারিক তাঁকে একই ভাবে পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে যেতে বলে দায় সারেন। পরদিন তিনি পঞ্চায়েত অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ ফের জানিয়ে দেয় তাঁর মেয়ের নামে  ওবিসি শংসাপত্র পঞ্চায়েতে আসে নি । কেন মেয়ের জাতি শংসাপত্র পাচ্ছেন না সেই বিষয়ে  না পঞ্চায়েত না ব্লক প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে কিছু জানাতে পারেন । ঊর্মিলাদেবী বলেন ,পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির আগে তার মেয়ে যাতে ওবিসি শংসাপত্র পেয়ে যায় তার ব্যবস্থা করার জন্য এদিন তিনি বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন । মেমারী ১ ব্লকের বিডিও আলী মহম্মদ ওলি উল্লাহ এদিন বলেন ,“জাতি শংসাপত্র পাবার জন্য হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে । তবে ঊর্মিলাদেবীর কন্যা দ্রুত যাতে বিবিসি শংসাপত্র দ্রুথ পান সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে “। মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’মেমারি  বিধানসভা এলাকার আবেদনকারীরা দ্রুত যাতে জাতি শংসাপত্র পান সেই বিষয়ে প্রশাসনকে আরও তৎপর হওয়ার কথা বলবো’।